স্থানীয়দের বরাদ্দ ৩০ শতাংশ নিশ্চিতকরণসহ উখিয়া সিবিও-এনজিও এ্যালায়েন্সের ৭ দাবি

বিশেষ প্রতিবেদক •

রোহিঙ্গাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে নির্ধারিত বরাদ্দ ৩০ শতাংশ নিশ্চিতকরণ এবং তা স্থানীয় সিবিও-এনজিওর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করাসহ ৭টি দাবি দিয়েছে উখিয়া সিবিও-এনজিও এ্যালায়েন্স (ইউসিএনএ)।

দাবিসমূহ হলো, শান্তি প্রতিষ্ঠা বিশেষ করে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় এনজিও-সিবিওর মাধ্যমে কর্মসূচী পরিচালনা, হিউম্যানিটরিয়ান সেক্টর গ্রুপ এবং আইএসসিজিতে ইউসিএনএ’র প্রতিনিধির অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত, রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে গুরুত্বপূর্ণ টিমে ইউসিএনএ’র প্রতিনিধির সাথে সাক্ষাতের সুযোগ রাখা, চাকুরিতে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার এবং চাকুরিরতদের ছাটাই বন্ধ, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ এবং কক্সবাজারের মানবিক কর্মসূচী পরিচালনায় যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে বাংলার প্রচলন করা।

ডোনার, সরকার, সংশ্লিষ্ট জাতীয় সংঘের সংস্থা, আইএনজিওদের কাছে দাবিসমূহ পেশ করেছেন হেলফ কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক ও সিবিও-এনজিও এ্যালায়েন্সের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম।

এ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন,
আমরা উখিয়া সিবিও এনজিও এ্যালায়েন্সের প্রতিনিধিবৃন্দ রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি জাতিসংঘের অঙ্গসমূহ, যারা রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় কাজ করে যাচ্ছে তাদের সাথে থেকে সহযোগিতা করতে বদ্ধ পরিকর। আমরা কক্সবাজার তথা উখিয়াতে মানবধিকার সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট আছি। স্থানীয় নাগরিক সমাজের সংগঠন (উখিয়া সিবিও এনজিও এ্যালায়েন্স) UCNA রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলার পাশাপাশি তাদের মর্যাদাপূর্ন প্রত্যাবাসন চাই। আমরা জাতিসংঘের সকল উদ্যোগে আমাদের অংশগ্রহন দাবি করছি এবং সবধরনের দালিলের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের মতামত দেওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত হওয়া উচিৎ ।

প্রথমত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবতার স্বার্থে এবং নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের বাঁচাতে বাংলাদেশের সীমান্ত খোলে দিয়েছিলেন। তার সেই উদার মানবিক চেতনার জন্য আমরা গর্বিত। ফলে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে এবং আমরা এই প্রশংসনীয় অবস্থান ধরে রাখতে চাই।

দ্বিতীয়ত, জাতিসংঘের প্রায় সকল সংস্থা এবং দাতাদের স্বাক্ষরিত গ্র্যান্ড বার্গেইন (২০১৬), প্রতিশ্রুত এবং শীর্ষস্থানীয় আর্ন্তজাতিক এনজিও গুলো স্বাক্ষরিত চার্টার ফর চেঞ্জ (২০১৫) হলো অর্থ সহায়তা স্থানীয় করণের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ দলিল। উখিয়া সিবিও এনজিও এ্যালায়েন্স তাদের সেই প্রতিশ্রুতিগুলো পালন করার দাবি করছেন। এই ঐতিহাসিক দলিলগুলোকে শুধুমাত্র কাগজে না রেখে বাস্তবে পরিনত করতে হবে।

তৃতীয়ত, আমরা রোহিঙ্গা পরিবারগুলোর স্বনির্ভরতা, মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্টা, আবাসন সমস্যা নিরসন সহ মৌলিক ও মানবাধিকার এর নিশ্চিয়তা কামনা করি। বিশেষ করে স্থানীয় সরকার এবং স্থানীয় এনজিও গুলোর মাধ্যমে ত্রান কর্মসূচী পরিচালনা, তথা মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে স্থানীয় করণ নিশ্চিত করার দাবী করছি। ত্রান কর্মসূচীর সব ক্ষেত্রে যথা সম্ভব স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।


ক্রমহ্রাসমান আর্থিক সহায়তার বিষয়টি মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে স্থানীয় সিবিও এনজিওদের কাছে শুধু দক্ষতা হস্তান্তরই নয়, ভবিষ্যতে সুরক্ষা এবং সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষার সম্ভাব্য বিষয়গুলো বিবেচনা করেই কর্মপরিকল্পনা গ্রহন করতে হবে। বিদ্যমান রোহিঙ্গা সংকট বিশ্বের অন্যান্য এলাকার শরণার্থীর পরিস্থিতির থেকে আলাদা। কারণ এখানে কোন সশস্ত্র সংঘাত নেই। উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় লোকজন নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের পার্শ্বে সবার আগে দাঁড়িয়েছিল। সুতারাং স্থানীয় করনে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো ও আর্ন্তজাতিক এনজিওগুলোর ইতিবাচক মনোভাব পোষন করা উচিৎ।


চতুর্থত, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় স্থানীয় এনজিও স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিদের এখানে খুব কম অংশগ্রহন রয়েছে। অথচ রোহিঙ্গা আগমনের পর থেকেই স্থানীয় এনজিও ও সিবিওগুলো সংকট মোকাবেলার সকল পর্যায়ে স্থানীয় সিবিও ও এনজিও অংশগ্রহণের দাবি করে আসছে।

উখিয়ার স্থানীয় এনজিও সিবিও এবং কমিউনিটি রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় সবচাইতে বিপন্ন ও ভীতসন্ত্রস্থ। অথচ সবধরণের মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে তাদের অংশগ্রহণ শূন্যের কোটায়। কেউই তাদের এই সংকটের বিষয়টি নিয়ে কখনো কথা বলেনি। সমাধানের জন্য এগিয়ে ও আসেনি। ফলে স্থানীয়করণের জন্য স্থানীয় সিবিও এনজিওগুলোর অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্থ। সুতরাং সহজ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য আইএসসিজির সাথে নিয়মিত ডায়লগ জরুরী।

সংবাদ সম্মেলনে অ্যালায়েন্সের প্রধান উপদেষ্টা উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক চৌধুরী, ছৈয়দ হোসেন চৌধুরী, অধ্যাপক তহিদুল আলম তহিদসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।